টমেটোর স্বাস্থ্য গুন- ও ক্ষতি।Tomato health and loss.
টমেটোর স্বাস্থ্য গুন- ও ক্ষতি।
পুষ্টি গুনে ভরপুর টমেটো সবজিটি আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। তবে উদ্ভিদ হিসেবে এর পরিচিতি ফল হিসেবে হলেও এটি রান্না করে খাওয়া যায়। এর অসাধার স্বাদ এবং অতুলনীও পুষ্টি গুনের কারনে সকলের কাছে খুবই প্রিয়। অনেকে আবার টমেটোকে বিলাতি বেগুন হিসেবেও চিনে থাকে। টমেটো একটি শীতকালীন সবজি তবে কৃষি বিজ্ঞানের প্রচেষ্টার ফলে এটি এখন গ্রীস্মকালেও ফলে থাকে। এটি আমাদের দেশের আবহাওয়ায় প্রচুর ফলে থাকে যার কারনে আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাহিরেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে। টমেটো পাকা অথবা কাচা অবস্থায়ও খাওয়া যায়। টমেটো সাধারনত আমরা রান্নাকরে, ভর্তা , সস্ , সালাদ ইত্যাদি অনেক ভাবে খেয়ে থাকি। এছাড়াও রূপচর্যার কাজও আমরা টমেটো ব্যাবহার করে থাকি।
যে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান টমেটোতে রয়েছেঃ-
- আমিষ
- ক্যালসিয়াম
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ফলিক এ্যসিড লাইকোপিন
- ক্রোমিয়াম
- বিটা- ক্যারটিন
- ভিটামিন কে
- ম্যাগনেশিয়াম
- ফসফরাস
- পটাশিয়াম
- মাঙ্গানিজ ইত্যাদি
কাঁচা অবস্থায় ১০০ গ্রাম টমেটোতে যে পরিমান ভিটামিন থাকে
পুষ্টি | পরিমান | দৈপ % |
ভিটামিন এ | ৪২ μg | ৫% |
বিটা-ক্যারটিন | ৪৪৯ μg | ৪% |
থায়ামিন বি ১ | ০.০৩৭ মি.গ্রা | ৩% |
নায়াসিন বি৩ | ০.৫৯৪ মি.গ্রা | ৪% |
ভিটামিন বি৬ | ০.০৮ মি.গ্রা. | ৬% |
ভিটামিন সি | ১৪ মি.গ্রা. | ১৭% |
ভিটামিন ই | ০.৫৪ মি.গ্রা. | ৪% |
ভিটামিন কে | ৭.৯ μg | ৮% |
ম্যাগনেশিয়াম | ১১ মি.গ্রা. | ৩% |
ম্যাঙ্গানিজ | ০.১১৪ মি.গ্রা | ৫% |
ফসফরাস | ২৪ মি.গ্রা. | ৩% |
পটাশিয়াম | ২৩৭ মি.গ্রা. | ৫% |
টমেটোর উপকারী গুনাগুন
- হাড় ও দাঁত ভালো রাখে:- আমরা জানি ভিটামিন-এ ভিটামিন-সি হাড় ও দাঁতকে মজবুত রাখে আর টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন-এ এবং সি। টমেটোতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার বিটা ক্যারটিন যা শরীরে প্রবেশের ফলে ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়। এছাড়াও টমেটোতে রয়েছে ক্যালশিয়াম যা হাড়কে মজবুত ও শক্ত ভাবে গড়ে তোলে। যাদের বেশী বয়সকালে অস্ট্রিয় অর্থাইটিস সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে তাহারা নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন দেখবেন বেশী বয়সকালে এই সম্ভাবনা আর থাকবে না।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে:– টমেটোতে রয়েছে বিটা-ক্যারটিন, লাইকোপেনের মত উপাদান যা আমাদের শরীর থেকে টকসিন এ্সিডকে বের করতে সাহায্য করে থাকে। এমন কি আমাদের ট্রেস লেভেলটাকেও কমিয়ে দ্যায়, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়াও টমেটোতে রয়েছে পটাশিয়াম নামক উপাদান যা উচ্চ রক্তচাপকে কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। টমেটোতে আছে প্রচুর পরিমাণ লাইকোপিন আর আছে বিটা-ক্যারোটিন নামক এই দুটি উপাদান যা হার্টকে সুরক্ষিত রাখে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধান করে:- যাদের কোষ্ঠকাঠিণ্য সমস্যা রয়েছে তাহারে নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন। টমেটোতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার যার ফলে পেটটাকে ভালো ভাবে পরিস্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধান হয়ে থাকে।
- ত্বক ভালো রাখে:- মুখের বা গায়ের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে টমেটো বিশেষ কাজ করে থাকে। কাঁচা টমেটো কে মুখে মেখে কিছুক্ষন রাখলে দেখাযাবে মুখের পোড়া দাগ দূর হয়ে গেছে এবং শরীরে লাগালে ত্বকের লাবন্যতা ফিরে এসে।
- গর্ভবতীদের জন্য উপকারীঃ- টমেটো গর্ভবতীদের জন্য বিশেষ উপকারী, কেননা টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামনি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি সহ অনেক ভিটামিন উপাদান যা গর্ভে থাকে বাচ্চার মানসিক বিকাশে এবং সুস্থ ভাবে গর্ভে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে থাকে।
- ডায়াবেটিশ নিয়ন্ত্রন করে:– যাদের ডায়াবেটিস টাইপ ১ ও টাইপ ২ তে রয়েছে তারা জদি টমেটো খায় তাদের ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রেনে চলে আসবে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ- দিনে অন্তত একটি করে টমেটো খেলে শরীরের ক্যান্সার হওয়ার প্রবনতা কমে যাবে। টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং এ্যন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের আমাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষ জন্ম হতে দ্যায় না।
- কিডনি ভালো রাখে:- টমেটোতে সালফার ও ক্লোরিন এর উপস্থিতি লিভার ও কিডনির কাজ সঠিক ভাবে করতে সাহায্য করে। তাই শরীরকে বিষক্রিয়া মুক্ত করতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন টমেটো খাওয়া উচিত। টমেটো খেলে বিষক্রিয়া মুক্ত হয় শরীর, সেই সঙ্গে শরীরের সকল বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায়।
- মাংস পেশী গঠন করে:– টমেটো মানব দেহের মাংস পেশী গঠনে সহায়তা করে থাকে। সবুজ রঙ্গের টমেটোতে টোমাটিডাইন বলে একটি উপাদান থাকে যা মানুষের শরীরের মাংস পেশীকে সঠিকভাবে গঠন করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ- চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখবে যে ৭ টি খাবার
- এ্যজমা ভালো করেঃ- টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ যা এ্যাজমা নিরাময়ে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
টমেটোর অপকারীতা:-
আমরা জানি অতিরিক্ত কোন কিছুই আমদের শরীরের জন্য ভালে না সে ক্ষেত্রে টমেটোর বিষয়টিও এক। টমেটো অতিরিক্ত খাবার ফলে আমরা কিছু সমস্যার সম্মুখিন হতে পারি। যেমন:-
- এলার্জি সমস্যা হতে পারে।
- পেটে গ্যাস জমা হতে পারে।
- পেট খারাপ হতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
Pingback: ভিটামিন সি - সময়ের সংলাপ