Scabies Alert লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হন
Scabies Alert লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হন
স্ক্যাবিস (Scabies) রোগ কী? — সহজভাবে ব্যাখ্যা
স্ক্যাবিস হলো একটি ত্বকের সংক্রমণজনিত রোগ, যা সৃষ্টি করে একটি ক্ষুদ্র পরজীবী Sarcoptes scabiei var. hominis। এই ক্ষুদ্র মাইট এত ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। তারা ত্বকের উপরের স্তরের ভেতরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে সেখানে ডিম পাড়ে, ফলে ত্বকে তীব্র চুলকানি, ফুসকুড়ি ও লালচে জ্বালা সৃষ্টি হয়।
এটি একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ, অর্থাৎ একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে খুব দ্রুত ছড়ায়।
স্ক্যাবিস রোগের ইতিহাস (History of Scabies)
স্ক্যাবিস পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পরিচিত ত্বক রোগগুলোর মধ্যে একটি।
এটি সম্পর্কে মানুষের ধারণা প্রায় ২৫০০ বছর পুরনো।
প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক এরিস্টটল প্রথম উল্লেখ করেন ত্বকের ভেতরে বাস করা ক্ষুদ্র জীবাণুর কথা, যা পরবর্তীতে স্ক্যাবিস মাইট হিসেবে পরিচিত হয়।
১৭০০–এর দশকে ইতালিয়ান অণুবীক্ষণবিদ Giovanni Cosimo Bonomo প্রমাণ করেন যে স্ক্যাবিস ব্যাকটেরিয়া নয়, বরং একধরনের ত্বক-বাসী পরজীবী দ্বারা হয়ে থাকে।
এই রোগ ইতিহাস জুড়ে—
- যুদ্ধকাল
- আশ্রয়শিবির
- দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা
- বেশি জনাকীর্ণ জায়গা
- শিশুদের আবাসিক বিদ্যালয়
—এসব স্থানে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়েছে।
আজও বিশ্বের কোটি মানুষ প্রতি বছর স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়।
ত্বকের সংক্রামক রোগ স্ক্যাবিস উপসর্গ
স্ক্যাবিস রোগের জীবাণুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of the Scabies Mite)
স্ক্যাবিস রোগ সৃষ্টিকারী মাইট অত্যন্ত ক্ষুদ্র—
- আকার মাত্র 0.2–0.4 মিলিমিটার
- খালি চোখে দেখা যায় না
- ডিম পাড়ার ক্ষমতা খুব বেশি
- ত্বকের ভেতরে বাঁচতে পারে ১–২ মাস
- শরীরের বাইরে বাঁচে ২৪–৩৬ ঘণ্টা
মাইটের জীবচক্র (Life Cycle)
ত্বকের সংক্রামক রোগ স্ক্যাবিস উপসর্গ
একটি মাইটের জীবনচক্র মোটামুটি ১০–১৭ দিনের মতো:
- Female mite ত্বকের ভেতরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে
- প্রতিদিন ২–৩টি করে ডিম পাড়ে
- ৩–৪ দিনে ডিম থেকে লার্ভা তৈরি হয়
- লার্ভা আবার ত্বকের ভেতরে বড় হয়ে প্রাপ্তবয়স্ক মাইটে পরিণত হয়
একজন মানুষের শরীরে প্রায় ১০–১৫টি মাইট থাকলেও প্রচণ্ড চুলকানি দেখা দেয়। তবে ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস–এ এই সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ত্বকের সংক্রামক রোগ স্ক্যাবিস উপসর্গ ত্বকের সংক্রামক রোগ স্ক্যাবিস উপসর্গ
স্ক্যাবিস কীভাবে ছড়ায়? (Transmission)
স্ক্যাবিস ছড়ানোর সবচেয়ে প্রধান পথ হলো ত্বক-সংস্পর্শ।
ছড়ানোর উপায়সমূহ:
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে দীর্ঘক্ষণ হাত ধরা
- একই বিছানা/কম্বল/তাকিয়া ব্যবহার
- একই পোশাক বা তোয়ালে ব্যবহার
- মা থেকে শিশুতে
- স্কুল/হোস্টেলে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ
- দম্পতির মধ্যে শারীরিক যোগাযোগ
এটি সাধারণ স্পর্শে দ্রুত ছড়ায় না; বরং দীর্ঘসময় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ প্রয়োজন।
কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে? (Risk Factors)
যে সকল মানুষ স্ক্যাবিসে বেশি আক্রান্ত হয়—
- অনেক মানুষ একসাথে থাকে
- শিশু বা বৃদ্ধ
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
- অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তি
- আশ্রয়হীন বা দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ
- স্কুল/হোস্টেল/নার্সিং হোম
- HIV+ বা অন্যান্য ইমিউন দুর্বল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
- ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস রোগীর সংস্পর্শে থাকা
স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণ (Early Symptoms)
স্ক্যাবিসের লক্ষণ সাধারণত দেখা দেয় ৪–৬ সপ্তাহ পর।
এর আগে রোগী আক্রান্ত হলেও কোনো চিহ্ন দেখা যায় না—এ সময় অন্যকে সংক্রমণ দিতে পারে।
প্রাথমিক লক্ষণ:
- রাতের বেলা তীব্র চুলকানি
- ত্বকে সূক্ষ্ম লাইন বা সুড়ঙ্গের মতো দাগ
- লালচে দানা বা ফুসকুড়ি
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
- ত্বক ঘষলে জ্বালা লাগা
স্ক্যাবিসে রাতের চুলকানি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন।
শরীরের যে অংশে স্ক্যাবিস বেশি হয়
বয়সভেদে আক্রান্ত অংশ আলাদা হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে:
- আঙুলের ফাঁক
- কব্জির ভাঁজ
- কনুই
- কোমর
- নাভির চারপাশ
- পিঠ
- উরুর ভেতর দিক
- যৌনাঙ্গ অঞ্চল
শিশুদের ক্ষেত্রে:
- হাতের তালু
- পায়ের তলা
- মাথার ত্বক
- মুখমণ্ডল
- গলা
শিশুরা দ্রুত সংক্রমিত হয় এবং তীব্রভাবে চুলকায়।
স্ক্যাবিস রোগের ধরন (Types of Scabies)
১) সাধারণ স্ক্যাবিস (Classic Scabies)
এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণ।
লক্ষণ:
- মাঝারি মাত্রার চুলকানি
- কয়েক ডজন মাইট
- শরীরে ছোট ছোট সুড়ঙ্গ
২) নরওয়েজিয়ান বা ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস (Crusted Scabies)
এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক রূপ।
এতে—
- লক্ষ লক্ষ মাইট থাকে
- ত্বক শক্ত, মোটা, চিটচিটে স্তর তৈরি হয়
- শরীরের বড় অংশ আক্রান্ত হয়
- সহজেই অন্যকে সংক্রমিত করে
ইমিউন কম ব্যক্তিদের মধ্যে হয়।
স্ক্যাবিস রোগে কি চুলকানি তীব্র হয়? কেন হয়?
হ্যাঁ। স্ক্যাবিসে চুলকানি অস্বাভাবিক মাত্রায় তীব্র হয় কারণ—
- মাইট ত্বকের ভেতর সুড়ঙ্গ করে
- ত্বক এতে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখায়
- ডিম ও বর্জ্য পদার্থ শরীরে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে
রাতের বেলা চুলকানি বাড়ে কারণ তখন শরীরের তাপ ও রক্তপ্রবাহ বাড়ে।
স্ক্যাবিস রোগে নিজে নিজে কি ভালো হয়?
না।
স্ক্যাবিস নিজে নিজে কখনো ভালো হয় না।
রোগ যত দেরি হবে, মাইটের সংখ্যা তত বাড়বে এবং আরো অনেক মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে।
চিকিৎসা ছাড়া স্ক্যাবিস কয়েক মাস থেকে বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
স্ক্যাবিস রোগের বিস্তারিত লক্ষণ, স্টেজ, ত্বকের পরিবর্তন, জটিলতা
স্ক্যাবিস রোগের বিস্তারিত লক্ষণ (Detailed Symptoms of Scabies)
স্ক্যাবিসের লক্ষণ বয়স, ইমিউন সিস্টেম এবং সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। নিচে প্রতিটি লক্ষণ আলাদা করে ব্যাখ্যা করা হলো—
১) রাতের বেলা তীব্র চুলকানি (Severe Night Itching)
স্ক্যাবিসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চিহ্ন হলো রাতের বেলা অস্বাভাবিক চুলকানি।
কারণ—
- রাতে শরীর গরম থাকে
- মাইট সক্রিয় হয়
- স্নায়ুতন্ত্র চুলকানিতে বেশি সংবেদনশীল থাকে
এই চুলকানি এত তীব্র হতে পারে যে—
- ঘুম নষ্ট হয়ে যায়
- স্ক্র্যাচ করলে ত্বক কেটে যায়
- শিশুরা কাঁদতে থাকে
২) ত্বকে সুড়ঙ্গ (Burrows) দেখা যায়
মাইট ত্বকের নিচে ছোট সুড়ঙ্গ তৈরি করে যা দেখা যায়—
- সাদা
- ধূসর
- তামাটে রেখা হিসেবে
- দৈর্ঘ্য ১–১০ মিলিমিটার
এগুলো সাধারণত পাওয়া যায়—
- আঙুলের ফাঁকে
- কব্জিতে
- নাভির পাশে
- কোমরে
- যৌনাঙ্গে
- বগলে
সুড়ঙ্গ হল স্ক্যাবিসের সবচেয়ে নিশ্চিত চিহ্ন।
৩) লালচে দানা/ফুসকুড়ি (Rash & Papules)
ত্বকে ছোট ছোট দানা ও ফুসকুড়ি দেখা যায়—
- লালচে
- পানি ভর্তি ছোট পুঁজ
- কখনও চুলকানোর দাগসহ
এগুলো শরীরের যে কোনো জায়গায় হতে পারে, তবে বেশি দেখা যায়—
- হাত
- কনুই
- কোমর
- পা
- পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গে ছোট দানা
৪) ত্বকে ঘামাচির মতো ছোট ছোট ব্রণ (Pimple-like bumps)
স্ক্যাবিসে অনেক সময় ব্রণের মতো দানা হয়।
এই দানাগুলো স্ক্র্যাচ করলে পুঁজ বা পানি বের হতে পারে।
৫) ত্বক পুরু হয়ে যাওয়া (Thickening of Skin)
বিশেষ করে দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করলে—
- ত্বক শক্ত হয়ে যায়
- ঘষা লাগে
- খসখসে হয়ে যায়
হাতে-পায়ে, কোমরে বেশি দেখা যায়।
৬) দ্বিতীয় সংক্রমণ (Secondary Infection)
চুলকাতে চুলকাতে ত্বক কেটে গেলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে সংক্রমণ হয়—
- ইমপেটিগো
- সেলুলাইটিস
- ফোঁড়া
এগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
৭) শিশুদের লক্ষণ আলাদা (Scabies in Children)
শিশুদের ক্ষেত্রে স্ক্যাবিস আরো তীব্র হয়—
- মাথার তালু আক্রান্ত হতে পারে
- পায়ের তলায় ফুসকুড়ি
- ঘুম ভেঙে ভেঙে কান্না
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- পুরো শরীর জুড়ে দানা
শিশুর চুলকানি জীবন-যাত্রা নষ্ট করে দিতে পারে।
৮) গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে লক্ষণ
তীব্র—
- চুলকানি
- র্যাশ
- ইনফেকশন রিস্ক
তবে মায়ের শরীরে স্ক্যাবিস থাকা শিশুর ক্ষতি করে না,
কিন্তু নবজাতকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্ক্যাবিস রোগের ৩টি স্টেজ (Stages of Scabies)
স্ক্যাবিস সাধারণত তিনটি প্রধান ধাপে ভাগ করা যায়—
১) প্রাথমিক স্টেজ (Initial Stage)
সময়: আক্রান্ত হওয়ার ৭–১৪ দিন পর
লক্ষণ:
- হালকা চুলকানি
- সামান্য র্যাশ
- কখনো কিছুই দেখা যায় না
এই স্টেজে রোগী বুঝতে না পেরে অসংখ্য মানুষকে সংক্রমিত করে।
২) মধ্যম স্টেজ (Moderate Stage)
সময়: ৩–৬ সপ্তাহ
লক্ষণ:
- তীব্র চুলকানি
- সুড়ঙ্গ পরিষ্কার দেখা যায়
- দানা/ফুসকুড়ি
- ঘুম নষ্ট হওয়া
এই সময় রোগী সাধারণত স্ক্যাবিস চিনতে পারে।
৩) উন্নত স্টেজ (Severe/Advanced Stage)
চিকিৎসা না করলে এ স্তরে পৌঁছায়—
- ত্বক শক্ত হয়ে যায়
- দানা বড় হয়
- ব্যথা সৃষ্টি হয়
- ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হয়
- শরীরের বড় অংশ আক্রান্ত হয়
এসময় রোগ দ্রুত ছড়ায়।
ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস (Norwegian Scabies) — সবচেয়ে বিপজ্জনক ধরন
এই ধরনে—
- ত্বক মোটা, শক্ত, স্তরযুক্ত হয়ে যায়
- ত্বকে চিটচিটে আবরণ থাকে
- মাইটের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়
- অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি কয়েকশ গুণ বেশি
এটি সাধারণত হয়—
- HIV রোগী
- ক্যান্সার রোগী
- অতিবৃদ্ধ মানুষ
- ইমিউন সিস্টেম দুর্বল ব্যক্তিদের
ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস জীবনঘাতী সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।
স্ক্যাবিসের জটিলতা (Complications)
চিকিৎসা না করলে স্ক্যাবিস থেকে—
১) ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন
- ইমপেটিগো
- সেলুলাইটিস
- ইরাইসিপেলাস
২) রক্ত সংক্রমণ (Sepsis)
চুলকাতে চুলকাতে ত্বক কেটে গেলে জীবাণু রক্তে ঢুকে যায়।
৩) কিডনি জটিলতা
স্ট্রেপ্টোকক্কাস সংক্রমণ হলে Post-streptococcal glomerulonephritis হতে পারে।
৪) ঘুমের সমস্যা ও মানসিক চাপ
- ঘুমের ঘাটতি
- উদ্বেগ
- দুশ্চিন্তা
- সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি
৫) শিশুর ক্ষেত্রে অপুষ্টি
চুলকানি ও অস্বস্তির কারণে খাবার কম খায়।
স্ক্যাবিস কি ছোঁয়াচে রোগ? কত দ্রুত ছড়ায়?
হ্যাঁ, স্ক্যাবিস অত্যন্ত সংক্রামক।
ছড়ায়:
- দীর্ঘ স্কিন-টু-স্কিন সংস্পর্শ
- বিছানা, কম্বল, বালিশ
- একই কাপড় ব্যবহার
- যৌন সম্পর্ক
- দম্পতির মধ্যে
- মা থেকে শিশু
ছড়ায় না:
- হাত মেলানো
- দ্রুত স্পর্শ
- একই রুমে থাকা
স্ক্যাবিস ছড়াতে ২০–৩০ মিনিটের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ লাগে।
স্ক্যাবিস রোগ নির্ণয়, ডায়াগনসিস, চিকিৎসার মূলনীতি, ঔষধ ও ডোজ
স্ক্যাবিস রোগ কীভাবে নির্ণয় করা হয়? (Diagnosis of Scabies)
স্ক্যাবিস নির্ণয় করার প্রধান উপায় হলো রোগীর লক্ষণ + ইতিহাস + শারীরিক পরীক্ষা। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না।
স্ক্যাবিস শনাক্ত করতে চিকিৎসকেরা তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন:
- রাতের বেলা তীব্র চুলকানি
- ত্বকে সুড়ঙ্গ বা burrow lines
- একই পরিবার বা আশেপাশে অনেকে আক্রান্ত হওয়া
চিকিৎসক কীভাবে স্ক্যাবিস পরীক্ষা করেন? (Clinical Examination)
১) ত্বক পর্যবেক্ষণ
চিকিৎসক খোঁজেন—
- দানা
- সুড়ঙ্গ
- লালচে র্যাশ
- খসখসে ত্বক
২) স্কিন স্ক্র্যাপিং টেস্ট (Skin Scraping)
এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।
পদ্ধতি:
- আক্রান্ত জায়গার ওপর ব্লেড দিয়ে হালকা স্ক্র্যাপ করা
- মাইট, ডিম বা মলমিশ্রণের চিহ্ন মাইক্রোস্কোপে দেখা
যদি এগুলো পাওয়া যায় = নিশ্চিত স্ক্যাবিস।
৩) ডার্মাটোস্কোপি (Dermatoscopy)
একটি বিশেষ লেন্স দিয়ে ত্বক বড় করে দেখা হয়।
এতে একজোড়া মাইট + সুড়ঙ্গ একদম স্পষ্ট দেখা যায়।
৪) টেপ টেস্ট (Adhesive Tape Test)
স্বচ্ছ টেপ ত্বকে লাগিয়ে তুলে নিয়ে মাইক্রোস্কোপে দেখা হয়।
স্ক্যাবিস কোন রোগগুলোর সাথে মিল থাকে? (Differential Diagnosis)
অনেক সময় স্ক্যাবিসকে ভুল করে অন্য রোগ মনে করা হয়—
- একজিমা
- অ্যালার্জি র্যাশ
- ঘামাচি
- ফাঙ্গাল ইনফেকশন
- কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস
- সোরিয়াসিস
তাই সুড়ঙ্গ (burrow) চিহ্ন দেখলে স্ক্যাবিস বেশি সন্দেহ হয়।
স্ক্যাবিস রোগের চিকিৎসার মূল নীতি (Principles of Treatment)
স্ক্যাবিস চিকিৎসায় তিনটি ভিত্তি আছে—
১) মাইট সম্পূর্ণ ধ্বংস করা
এজন্য ব্যবহার হয় স্কেবিসাইড (Scabicide) ঔষধ।
২) পরিবার, স্ত্রী/স্বামী, বাসার সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া
কারণ স্ক্যাবিস ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত।
একজন চিকিৎসা নিলে আরেকজন না নিলে রোগ আবার ফিরে আসে।
৩) বিছানা–কাপড়–গদি সব পরিষ্কার করা
ধোয়া, রোদে শুকানো, গরম পানি ব্যবহার করা—অত্যন্ত জরুরি।
ক্রাস্টেড স্ক্যাবিসের বিশেষ চিকিৎসা
এটি সবচেয়ে কঠিন ধরন, তাই বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োজন:
- পারমেথরিন 5% ক্রিম সপ্তাহে ২–৩ বার
- আইভারমেকটিন ৩–৭ ডোজ (ডাক্তার নির্দেশ অনুযায়ী)
- ত্বকের শক্ত স্তর ক্যারাটোলাইটিক দিয়ে নরম করে
- পরিবারের সবাইকে চিকিৎসা
ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস না মানলে রোগ সারবে না।
স্ক্যাবিস চিকিৎসার পর চুলকানি কি থাকে?
হ্যাঁ।
রোগ সেরে গেলেও ২–৬ সপ্তাহ চুলকানি থাকতে পারে।
কারণ:
- মৃত মাইটের অংশ
- অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া
- ইমিউন সিস্টেমের স্মৃতি
এটা স্বাভাবিক, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
এর জন্য এন্টিহিস্টামিন বা লোশন ব্যবহার করা হয়।
ঘরোয়া সহায়ক চিকিৎসা (Supportive Home Remedies)
এগুলো রোগ সারায় না, কিন্তু আরাম দেয়—
- ঠান্ডা পানি দিয়ে স্নান
- লোশন (Calamine lotion)
- ময়েশ্চারাইজার
- নখ ছোট রাখা
- ক্ষতস্থানে অ্যান্টিবায়োটিক মলম
স্ক্যাবিস রোগের প্রতিরোধ, পরিবারের চিকিৎসা, ঘর পরিস্কার, বিশেষ নির্দেশনা
স্ক্যাবিস রোগের প্রতিরোধ (Prevention of Scabies)
স্ক্যাবিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। মূলভাবে দুটি দিক—ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ।
১) ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা
- নিয়মিত গোসল
- কাপড়, তোয়ালে, অন্তর্বাস আলাদা রাখা
- ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
- নিজের বিছানা ও কাপড় নিয়মিত রোদে শুকানো
২) পরিবার ও আশেপাশের মানুষ সচেতন রাখা
- পরিবারের সবাই যদি আক্রান্ত হয়, একসাথে চিকিৎসা নেওয়া
- স্কুল, হোস্টেল বা ওয়ার্কপ্লেসে সতর্ক থাকা
- আক্রান্ত মানুষকে আলাদা করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু সংস্পর্শ কমানো দরকার
ঘর ও কাপড় পরিষ্কার করার নিয়ম (Cleaning and Disinfecting Environment)
১) কাপড় ও বিছানা
- গরম পানি (>50°C) দিয়ে ধোয়া
- রোদে শুকানো
- না ধোয়ার ক্ষেত্রে, সিল করে ৭২ ঘণ্টা আলাদা রাখা
- কম্বল, তোয়ালে, চাদর একসাথে ব্যবহার না করা
২) আসবাবপত্র ও মেঝে
- শুকনো কাপড় বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার
- মাইট সাধারণত ২৪–৪৮ ঘণ্টা বাইরে বাঁচতে পারে না
- নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করা
৩) জুতা ও অন্যান্য ব্যবহারযোগ্য জিনিস
- লম্বা সময় রোদে বা আলাদা রাখা
- ডায়ারি, বই, খেলনার ক্ষেত্রে সাধারণ স্পর্শে সংক্রমণ কম
এক পরিবারের সকলকে একসাথে চিকিৎসা দেওয়া (Family Treatment)
স্ক্যাবিসে শুধু একজনের চিকিৎসা যথেষ্ট নয়। কারণ—
- অন্যরা আক্রান্ত হলেও লক্ষণ কম থাকতে পারে
- সংক্রমণ আবার ফিরে আসে
পদ্ধতি:
- পারমেথরিন বা ডাক্তারি ঔষধ একসাথে ব্যবহার
- কাপড়, তোয়ালে একসাথে পরিবর্তন
- বিছানা আলাদা না হলেও শুকানো ও পরিষ্কার রাখা
- শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীদের আলাদা যত্ন
শিশুদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা (Children)
- শিশুদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই কম শক্তিশালী ক্রিম বা সালফার ব্যবহার করা হয়
- মাথার ত্বক আক্রান্ত হলে ডাক্তার দেখানো জরুরি
- ঘুমের সমস্যা থাকলে পরিবেশ আরামদায়ক করা
- নখ ছোট রাখা, যাতে স্ক্র্যাচে সংক্রমণ না হয়
- স্কুলে সংক্রমণ রোধে শিক্ষক ও অভিভাবক সচেতন
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য নির্দেশনা
- আইভারমেকটিন গর্ভবতীর জন্য বিপজ্জনক, এড়িয়ে চলা
- গর্ভবতী নারীর ত্বক ধোয়া ও পরিষ্কার রাখা
- শিশুর সংক্রমণ রোধে হাত ধোয়া
- ঘরে সঠিক পরিস্কার ও কাপড় ব্যবস্থাপনা
বৃদ্ধ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ব্যক্তির নির্দেশনা
- দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি, র্যাশ বা ইনফেকশন হলে ডাক্তার দেখানো
- বিছানা ও কাপড় নিয়মিত পরিষ্কার
- ঘর উষ্ণ ও শুষ্ক রাখা
- চিকিৎসা সম্পূর্ণ করানো, মধ্যপথে থেমে না যাওয়া
ঘরোয়া সহায়ক চিকিৎসা ও আরাম দেয়ার উপায় (Home Supportive Care)
- ঠান্ডা স্নান বা কুলকুচি
- হালকা এন্টিহিস্টামিন, ডাক্তার অনুমোদন প্রয়োজন
- ক্ষতস্থানে অ্যান্টিবায়োটিক মলম (secondary infection হলে)
- পরিস্কার ও শুকনো কাপড়
স্ক্যাবিস রোগের দীর্ঘমেয়াদী সতর্কতা
- রোগ সারলেও সংক্রমণ পুনরায় হতে পারে, তাই সতর্কতা অব্যাহত রাখুন
- নতুন পোশাক বা বিছানা ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকান
- শিশু ও পরিবারের সকলকে নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতন করা
- ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ কমানো এবং পরিস্কার রাখা
স্ক্যাবিস রোগে FAQ (Frequently Asked Questions)
Q1: স্ক্যাবিস কতদিনে ছড়ায়?
A: দীর্ঘ সংস্পর্শে ২০–৩০ মিনিটে সংক্রমণ সম্ভব।
Q2: পারমেথরিন কত দিন ধরে ব্যবহার করতে হয়?
A: সাধারণত একবার, ৭–১০ দিন পরে দ্বিতীয়বার প্রয়োগ।
Q3: ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস কি মারাত্মক?
A: হ্যাঁ, লাখ লাখ মাইট থাকায় দ্রুত সংক্রমণ ও ইনফেকশন ঝুঁকি বেশি।
Q4: শিশু, গর্ভবতী বা বৃদ্ধরা পারমেথরিন ব্যবহার করতে পারবে?
A: সাধারণত পারমেথরিন নিরাপদ, তবে গর্ভবতী বা ছোট শিশুদের জন্য ডোজ/ফ্রিকোয়েন্সি ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে।
Q5: চুলকানি শেষ না হলেও ঔষধ বন্ধ করা যাবে?
A: না, চিকিৎসা সম্পূর্ণ করা জরুরি। চুলকানি স্বাভাবিকভাবে ২–৬ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।
স্ক্যাবিস রোগের সম্পূর্ণ প্রতিকার, হোম রিমেডি ও সচেতনতা
স্ক্যাবিস রোগের সম্পূর্ণ প্রতিকার (Complete Treatment of Scabies)
স্ক্যাবিস পুরোপুরি সারানোর জন্য তিনটি ধাপ জরুরি—
- মাইট ধ্বংস করা
- পারমেথরিন 5% ক্রিম
- আইভারমেকটিন ট্যাবলেট (ডাক্তার অনুমোদিত)
- সালফার বা বেনজিল বেনজোয়েট প্রয়োগ
- পরিবার ও ঘরের সকলকে চিকিৎসা দেওয়া
- পরিবারের সবাই একসাথে চিকিৎসা নিলে পুনঃসংক্রমণ কমে
- কাপড়, বিছানা, কম্বল আলাদা বা পরিষ্কার রাখা
- সংক্রমণ রোধে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ
- কাপড় ও বিছানা গরম পানি দিয়ে ধোয়া, রোদে শুকানো
- আসবাবপত্র, জুতো, খেলনা নিয়মিত পরিষ্কার
- শিশু ও বৃদ্ধদের সচেতন করা
ঘরোয়া রিমেডি (Home Remedies for Scabies)
হোম রিমেডি স্ক্যাবিস পুরোপুরি সারায় না, কিন্তু চুলকানি কমায় আর আরাম দেয়:
- ঠান্ডা স্নান / কুলকুচি — চুলকানি ও ত্বক আরামদায়ক
- ময়েশ্চারাইজার — শুষ্ক ত্বক নরম রাখে
- নখ ছোট রাখা — স্ক্র্যাচ করলে ইনফেকশন কমে
- হালকা এন্টিহিস্টামিন — ডাক্তার অনুমোদিত
- রোদে কাপড় শুকানো — মাইট ধ্বংসে সাহায্য করে
স্বাস্থ্য সচেতনতা (Health Awareness for Scabies)
- ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে সতর্ক থাকা
- নতুন কাপড় বা বিছানা ব্যবহারের আগে ধোয়া
- শিশু ও পরিবারের সবাইকে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা
- দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা, হোস্টেল বা স্কুলে স্বাস্থ্য শিক্ষা
- দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে সংক্রমণ দ্রুত থামানো সম্ভব
সম্পূর্ণ উপসংহার (Conclusion)
স্ক্যাবিস হলো ত্বকের সংক্রমণজনিত রোগ, যা ক্ষুদ্র পরজীবী (Sarcoptes scabiei) দ্বারা হয়। এটি অত্যন্ত সংক্রামক, তাই দ্রুত চিকিৎসা না করলে পরিবার ও আশেপাশের মানুষও আক্রান্ত হতে পারে।
মূল বিষয়াবলি:
- লক্ষণ: তীব্র চুলকানি, লালচে দানা, ত্বকে সুড়ঙ্গ
- স্টেজ: প্রাথমিক, মধ্যম, উন্নত / ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস
- চিকিৎসা: পারমেথরিন ক্রিম, আইভারমেকটিন, সালফার, বেনজিল বেনজোয়েট
- ঘর পরিচ্ছন্নতা ও পরিবারের সবাইকে চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
- ঘরোয়া সহায়ক: Calamine Lotion, ঠান্ডা স্নান, নখ ছোট রাখা, হালকা এন্টিহিস্টামিন
- প্রতিরোধ: ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ কমানো, কাপড় ও বিছানা পরিষ্কার, শিশু ও বৃদ্ধদের যত্ন
সঠিক চিকিৎসা + পরিচ্ছন্নতা + সচেতনতা মেনে চললে স্ক্যাবিস দ্রুত এবং সম্পূর্ণভাবে সারানো সম্ভব, এবং পুনঃসংক্রমণ রোধ করা যায়।
স্ক্যাScabies Alert লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হন Scabies Alert লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হন Scabies Alert লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হন Scabies Alert লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হন Scabies Alert লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হন Scabies Alert লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হন Scabies Alert লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হনবৈশিষ্ট্য স্ক্যাবিস রোগের পরিচয়-জীবাণুর বৈশিষ্ট্য স্ক্যাবিস রোগের পরিচয়-জীবাণুর বৈশিষ্ট্য স্ক্যাবিস রোগের পরিচয়-জীবাণুর বৈশিষ্ট্য স্ক্যাবিস রোগের প
দেশে প্রথমবারের মতো শনাক্ত ‘Genotype IIIb’ ভাইরাস
আরও শক্তিশালী হচ্ছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর
ঢাকা মেট্রোরেল (MRT Line-6) — বিস্তৃত বিশ্লেষণ
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসন (ISKCON)
খিরনিগাছ: পরিচিতি ব্যবহার ও উপকারিতা
খাবার হজম প্রক্রিয়া: ধাপ, কৌশল এবং হজম উন্নত করার বৈজ্ঞানিক উপায়


