News

২৬ গ্রামে ৩১০০০ একর পেয়ারা বাগান

২৬ গ্রামে ৩১০০০ একর পেয়ারা বাগান

ঝালকাঠির ভিমরুলি: এশিয়ার বৃহত্তম পেয়ারা বাজারের গল্প

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে, বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি, বরিশাল ও পিরোজপুর জেলার সিমান্তবর্তী এলাকায় একটি বিশেষ কৃষিপণ্য বাজার গড়ে উঠেছে, যা শুধু স্থানীয় জন্য নয়, দেশের অন্যান্য অংশের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এটি হলো পেয়ারা বাজার, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে স্থানীয়ভাবে এটি “গোইয়ার হাট” নামে পরিচিত।

বাজারের আকার ও বিস্তার

ঝালকাঠি, বরিশাল ও পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকায় এই পেয়ারা বাজারের বিস্তার অনেক। এই জেলার ২৬টি গ্রামে প্রায় ৩১,০০০ একর জমির উপর রয়েছে পেয়ারা বাগান। এই বিশাল এলাকায় হাজার হাজার পেয়ারা গাছের সারি সুসজ্জিতভাবে দেখা যায়। প্রতিটি বাগান বিভিন্ন প্রজাতির পেয়ারা চাষের জন্য পরিচিত। স্থানীয় মানুষরা বলেই থাকেন, এই এলাকায় পেয়ারা চাষ এখন শুধু কৃষি নয়, এটি এক সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার অংশ

কতজন কৃষক যুক্ত?

এই অঞ্চলে প্রায় ২০,০০০ পরিবার পেয়ারা চাষের সঙ্গে জড়িত। এই পরিবারগুলো শুধু পেয়ারা চাষ নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ, নৌকায় পরিবহন, বাজারজাতকরণ—এই পুরো প্রক্রিয়ায় তারা সক্রিয়ভাবে যুক্ত। প্রতিটি পরিবারের জীবিকা এই পেয়ারা বাগানের উপর নির্ভরশীল।

পেয়ারা বাজারের অবকাঠামো

পেয়ারা বাজার মূলত পানির উপর গড়ে উঠেছে, অর্থাৎ নৌকা-নির্ভর বাজার। প্রতিদিন শত শত নৌকা খালে ভরে আসে, যা এই বাজারকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। নৌকায় করে পেয়ারা আনা হয় এবং একইভাবে ক্রেতারা নৌকায় করে কিনে নিয়ে যান। এই পরিবহন পদ্ধতি শুধু পেয়ারা সরবরাহকে দ্রুত এবং কার্যকর করে তোলে না, বরং এটি বাজারের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যও তৈরি করেছে।

বাজারের প্রধান কেন্দ্র হলো ভিমরুলি, যেখানে দিনের ব্যস্ততম সময় দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলে। এই সময়ে খালে নৌকাগুলোর সংখ্যা চমকপ্রদভাবে বৃদ্ধি পায়। কয়েকশ নৌকা এক সঙ্গে খালে দাঁড়িয়ে থাকে। নৌকাগুলোতে পেয়ারা ভর্তি এবং ক্রেতারা সরাসরি নৌকায় বসে ক্রয়-বিক্রয় করে। এই দৃশ্য যেন এক জীবন্ত চিত্রকল্পের মতো মনে হয়।

বাজারে পেয়ারা সংগ্রহ ও বিক্রয় প্রক্রিয়া

কৃষকরা সকালে বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে। তারা পেয়ারাগুলো মন বা কেজিতে বাছাই করে নৌকায় লোড করে। বাজারে পৌঁছে এই নৌকা থেকে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করা হয়। এই বাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ পেয়ারা ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে। স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের ক্রেতারা বাজারের সরাসরি পেয়ারা সংগ্রহের জন্য আগ্রহী।

বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি লেনদেনই এই বাজারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। অনেক ক্ষেত্রে এখানে নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় হয়। কৃষকরা তাদের পেয়ারা নিলাম করেন এবং ক্রেতারা উচ্চ দামে কিনে নেন। এই প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ হয় বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে।

বাজারের সময়সূচি ও ব্যস্ততা

বাজারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হলো দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা। এই সময়ে বাজারে নৌকা ও মানুষের চিত্র এক অসাধারণ দৃশ্য সৃষ্টি করে। খালে নৌকার সংখ্যা কয়েকশ’ ছাড়িয়ে যায়। নৌকায় বসে কৃষকরা পেয়ারা বিক্রি করেন, আর ক্রেতারা সরাসরি নৌকা থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে।

বাজারের এই ব্যস্ততা শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনের প্রতিফলনও। গ্রামের মানুষরা এই সময়ে হাটে এসে কেবল ব্যবসা নয়, সামাজিকীকরণও করে। তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে, তথ্য বিনিময় করে এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে।

বাজারের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পেয়ারা বাজার শুধুমাত্র কৃষক নয়, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন খাতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। নৌকা চালক, বাজারের সহকারী, প্যাকেজিং শ্রমিক—সকলেই এই বাজারের সঙ্গে জড়িত। এই বাজারের মাধ্যমে ২০,০০০ পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া, এই বাজারের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি গতিশীল হয় এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রমও প্রভাবিত হয়।

বাজারে পেয়ারার প্রচলিত চাহিদা বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হন এবং পেয়ারা চাষ আরও প্রসারিত হয়।

পেয়ারা বাগানের বৈচিত্র্য

ভিমরুলি ও আশেপাশের গ্রামে অসংখ্য পেয়ারা বাগান রয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পেয়ারা চাষ করা হয়। এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, কৃষি বৈচিত্র্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকরা বাগানে সময়মতো যত্ন ও পরিচর্যা করে উচ্চমানের পেয়ারা উৎপাদন করেন।

এই পেয়ারা বাজারের মাধ্যমে বাগানগুলোর পেয়ারা সরাসরি হাটে আসে। বাজারে ক্রেতারা সরাসরি নৌকা থেকে পেয়ারা কিনে নিয়ে যান, যা কৃষক ও ক্রেতা উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক।

সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রভাব

পেয়ারা বাজার শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মানুষ শুধু পেয়ারা কেনা-বিক্রি করেন না, বরং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগও বজায় রাখেন। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা ও ঐতিহ্য এই বাজারের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে।

পেয়ারা বাজারের দৃশ্য, নৌকা চলাচল এবং কৃষক ও ক্রেতার মধ্যে সরাসরি লেনদেন এক জীবন্ত সাংস্কৃতিক চিত্রকল্প তৈরি করে। এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কেন্দ্র নয়, বরং স্থানীয় মানুষের জীবনধারা, ঐতিহ্য ও কৃষি সংস্কৃতির প্রতিফলন।

উপসংহার

ঝালকাঠি, বরিশাল ও পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠা এই পেয়ারা বাজার বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র। ২৬টি গ্রামে ৩১,০০০ একর জমির উপর বিস্তৃত এই বাগানগুলোতে ২০,০০০ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। বাজারের কেন্দ্রে অবস্থিত ভিমরুলি, যেখানে প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নৌকা ও মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি, তা এশিয়ার বৃহত্তম পেয়ারা বাজারের স্বীকৃতি দেয়।

পেয়ারা বাজার শুধু কৃষি উৎপাদন ও বিক্রয়ের কেন্দ্র নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও সামাজিক বন্ধনের প্রতিফলন। এখানে কৃষকরা বাগান থেকে সরাসরি পেয়ারা আনে, নৌকা দ্বারা হাটে পৌঁছে দেয় এবং ক্রেতারা সরাসরি নৌকা থেকে কিনে নিয়ে যায়। এই বাজারের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি সক্রিয় থাকে এবং কৃষকরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হন।

বাজারের দৃশ্য, নৌকায় চলাচল, সরাসরি লেনদেন, কৃষক ও ক্রেতার মুখে আনন্দ—সব মিলিয়ে এটি শুধু একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতীক। এশিয়ার বৃহত্তম পেয়ারা বাজার হিসেবে ভিমরুলি অঞ্চল বাংলাদেশের কৃষি ও সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।

ভাসমান পেয়ারা বাজার ভাসমান পেয়ারা বাজার ভাসমান পেয়ারা বাজার

২৬ গ্রামে ৩১০০০ একর পেয়ারা বাগান ২৬ গ্রামে ৩১০০০ একর পেয়ারা বাগান ২৬ গ্রামে ৩১০০০ একর পেয়ারা বাগান ২৬ গ্রামে ৩১০০০ একর পেয়ারা বাগান ২৬ গ্রামে ৩১০০০ একর পেয়ারা বাগান

সময়ের সংলাপের ফেইসবুক পেইজ

গুম প্রতিরোধে নতুন অধ্যাদেশ জারি

বাংলাদেশে পেপ্যাল আসার সম্ভাবনা

সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স চাকরি বিজ্ঞপ্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *