ভূতের গলি ভূতের নয় ইতিহাসের সাক্ষী
ভূতের গলি ভূতের নয় ইতিহাসের সাক্ষী
ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড ধরে হাতিরপুলের দিকে গেলে, একটু বামে চোখ রাখলেই চোখে পড়ে একটি ছোট্ট, সরু গলি। নামটি শুনলে অনেকের মনে এক অদ্ভুত কৌতূহল জাগে—“ভূতের গলি”। যদিও নাম শুনলেই ভয়ের ছোঁয়া মনে হয়, তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে কোনো ভূত নেই, কোনো ভুতুড়ে বাড়িও নেই। আসল রহস্যের সঙ্গে যুক্ত ইতিহাস এবং একটি ইংরেজ সাহেবের গল্প—যিনি ছিলেন প্রথম এবং একমাত্র ইংরেজ বাসিন্দা ওই এলাকায়।
এই এলাকার নাম আসে মিস্টার বুথের নাম থেকে। ইংরেজ শাসনকালে ঢাকায় কয়েকজন অভিজাত ইংরেজ বসবাস করতেন, যারা মূলত প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কাজকর্মে নিয়োজিত ছিলেন। মিস্টার বুথও ছিলেন সেই সময়ের একজন। তিনি এলিফ্যান্ট রোডের কাছাকাছি স্থানে একটি বাড়ি কিনেছিলেন এবং সেখানেই তিনি বসবাস করতেন। বুথ ছিলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি পরিবেশ, সমাজ এবং আশেপাশের মানুষের সঙ্গে বেশ পরিচিত ছিলেন। স্থানীয়রা তাকে জানতেন এবং তিনি ছিলেন এলিফ্যান্ট রোড ও হাতিরপুল এলাকার প্রথম ইংরেজ বাসিন্দা।
সময় কালের সাথে সাথে মিস্টার বুথের নাম স্থানীয় ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে দাঁড়ালো “বুথের গলি”। গলিটি তখন থেকেই পরিচিত হয়ে যায়। স্থানীয় লোকেরা বলতে থাকেন—“বুথের গলি”, এবং ধীরে ধীরে নামটি প্রতিদিনের কথোপকথনে চলে আসে।
যেখানে এক সময় শুধু একটি অভিজাত ইংরেজ সাহেবের বাস ছিল, সেখানে আজ রয়েছে স্থানীয় মানুষের বসতি, ছোট ছোট দোকানপাট এবং সরু রাস্তার বৃত্তাকার গঠন। গলির চারপাশে ছোট ছোট দোকান, খাবারের স্টল এবং বাসিন্দাদের চলাচল—সব মিলিয়ে গলিটি একটি চমৎকার নগর জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে।
তবে নামের রহস্য এখনও অনেকের মনে কৌতূহল জাগায়। কেন মানুষ “ভূতের গলি” বলেই এই গলিকে চেনেন? ইতিহাসে এর কোনো ভূতুড়ে গল্প নেই। আসল বিষয়টি হলো, সময়ের সঙ্গে নামের উচ্চারণ এবং স্থানীয়দের কৌতূহলজনিত কল্পনা এটিকে ভূতুড়ে রূপ দেয়। বিশেষ করে শিশুরা বা প্রথমবার এলিফ্যান্ট রোড এলাকা ভ্রমণ করা মানুষরা গলির সরু পথ এবং পুরনো দালান দেখে মনে করেন এখানে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে।
বুথের গলির নাম শুধু ইতিহাসের স্মারক নয়, এটি একটি প্রমাণ যে কিভাবে স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কল্পনা একত্রিত হয়ে স্থানীয় পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গল্প তৈরি করতে পারে। বাস্তবে, বুথের গলি একাধারে ইতিহাস, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড এবং দৈনন্দিন নগর জীবনের সংমিশ্রণ।
আজকের দিনে বুথের গলিটি আরও বেশি জনপ্রিয়। ফটোগ্রাফাররা এখানে ছবি তুলতে আসেন, স্থানীয় দোকানগুলো ব্যবসা করছে এবং পথচারীরা গল্প শুনে আনন্দ পান। অনেকেই এখনও ভুল করে ভূত-গল্পের সাথে এটি যুক্ত করেন, তবে যারা ইতিহাস জানে তারা জানে—এটি শুধু এক ইংরেজ সাহেবের নামানুসারিত স্থান। মিস্টার বুথ হয়তো শেষপর্যন্ত বিদ্যমান নয়, কিন্তু তার নাম আজও বাঁচিয়ে রেখেছে ঢাকার একটি ছোট্ট গলিকে, যা এখন সবার জন্য পরিচিতি এবং কৌতূহলের কেন্দ্র।
বুথের গলির এই গল্প আমাদের শেখায়—প্রতিটি শহরের প্রতিটি নামের পেছনে লুকিয়ে থাকে ইতিহাস, মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির স্পর্শ। শুধুমাত্র কল্পনায় নয়, প্রকৃত ইতিহাসকেও বোঝা দরকার। গলিটি আমাদের স্মরণ করায় যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাম, স্থান এবং মানুষের ধারণা মিলিত হয়ে নতুন গল্প তৈরি করে—যা কখনো ভয়ঙ্কর, কখনো শিক্ষণীয়, আবার কখনো আনন্দময়।
শেষমেষ, বুথের গলি ভূতের গল্প নয়; এটি ইতিহাসের সাক্ষী, সংস্কৃতির চিহ্ন এবং ঢাকার পুরনো নগর জীবনের এক অসাধারণ অংশ। যারা প্রথমবার গলিতে প্রবেশ করেন, তারা শুধু সরু রাস্তা দেখেন না, তারা এক সময়ে একটি ইংরেজ সাহেবের ছোঁয়া ও স্থানীয় ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগও অনুভব করেন।
ভূতের গলি ভূতের নয় ইতিহাসের সাক্ষী ভূতের গলি ভূতের নয় ইতিহাসের সাক্ষী ভূতের গলি ভূতের নয় ইতিহাসের সাক্ষী ভূতের গলি ভূতের নয় ইতিহাসের সাক্ষী ভূতের গলি ভূতের নয় ইতিহাসের সাক্ষী ভূতের গলি ভূতের নয় ইতিহাসের সাক্ষী
ধানমন্ডি নামের নাম করনের ইতিহাস

