Health

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?


ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস (Mucormycosis) হলো এক ধরনের বিরল কিন্তু অত্যন্ত গুরুতর ছত্রাকজনিত সংক্রমণ। এটি মূলত মিউকরমাইসেটস (Mucormycetes) নামক একদল ছত্রাক দ্বারা ঘটে। এই ছত্রাকগুলো সাধারণত পরিবেশে পাওয়া যায়—যেমন মাটি, পচা কাঠ, পচা ফল-সবজি, কম্পোস্ট, ধুলো, নির্মাণস্থল ইত্যাদিতে।

এটি সাধারণত মানুষকে আক্রান্ত করে তখনই, যখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল থাকে।


ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কীভাবে দেহে প্রবেশ করে?

ছত্রাকের স্পোর শ্বাসনালীর মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে, আবার খোলা ক্ষত বা আঘাতের মাধ্যমেও সংক্রমণ হতে পারে।
এর প্রধান প্রবেশ পথ:

  • শ্বাস বা নাকে টেনে নেওয়া
  • কাটা বা পোড়া জায়গা দিয়ে
  • দূষিত পানি বা বস্তুর সংস্পর্শে
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে স্বাভাবিক পরিবেশ থেকেও

কে বেশি ঝুঁকিতে?

যেহেতু ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একটি “opportunistic infection”, তাই নিম্নোক্ত ব্যক্তি বেশি ঝুঁকিতে থাকে—

  • ডায়াবেটিস রোগী (বিশেষ করে অপরিচালিত ডায়াবেটিস)
  • স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া রোগী
  • ক্যানসারের রোগী
  • কিডনি রোগী
  • অঙ্গ প্রতিস্থাপনকারী
  • কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত বা সুস্থ হওয়া রোগী, বিশেষ করে যারা স্টেরয়িড নিয়েছিলেন
  • দীর্ঘদিন ICU তে থাকা রোগী

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ

লক্ষণ কোন অঙ্গ আক্রান্ত তার উপর নির্ভর করে। সাধারণত ৪টি স্থানকে বেশি আক্রান্ত করে—

১. রাইনো-অরবিটাল / সাইনাস (নাক-চোখ-সাইনাস)

  • নাক বন্ধ লাগা
  • নাক বা মুখে কালো দাগ
  • মুখ বা নাকে ব্যথা
  • চোখ ফুলে যাওয়া
  • দৃষ্টি ঝাপসা
  • মাথাব্যথা

২. ফুসফুস (Pulmonary mucormycosis)

  • শ্বাস নিতে কষ্ট
  • বুক ব্যথা
  • জ্বর
  • কাশি

৩. ত্বক (Cutaneous mucormycosis)

  • লাল দাগ → ফোলা → কালো দাগ
  • ক্ষত স্থানে ব্যথা
  • ত্বকে পচন ধরার মতো লক্ষণ

৪. পেট-আন্ত্রিক অংশ (Gastrointestinal mucormycosis)

  • পেট ব্যথা
  • বমি
  • রক্তক্ষরণ

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কেন বিপজ্জনক?

  • এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ও টিস্যুকে নষ্ট করে।
  • সংক্রমণ বারবার দেরিতে শনাক্ত হয়।
  • শ্বাসনালী, চোখ, এমনকি মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
  • চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি।

চিকিৎসা কীভাবে হয়?

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করতে হয়।

মূলত তিন ধাপে চিকিৎসা করা হয়—

১. দ্রুত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ শুরু করা

যেমন—

  • Amphotericin B
  • Posaconazole
  • Isavuconazole

২. আক্রান্ত টিস্যু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ

গুরুতর হলে নেক্রোটিক অংশ কেটে ফেলা লাগে। কখনও কখনও চোখের অংশও অপসারণ করতে হয়।

৩. ঝুঁকির কারণ নিয়ন্ত্রণ

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
  • স্টেরয়েড কমানো
  • সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • স্টেরয়েড চিকিৎসা শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন
  • ICU তে চিকিৎসার সময় রোগীর স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা
  • ধুলো বা নির্মাণস্থলে মাস্ক ব্যবহার
  • COVID-19 রোগীর ক্ষেত্রে নিয়মিত শর্করা পরীক্ষা

সারসংক্ষেপ

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একটি বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী ছত্রাক সংক্রমণ, যা মূলত দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। দ্রুত শনাক্তকরণ, সঠিক চিকিৎসা এবং ঝুঁকির কারণ নিয়ন্ত্রণই এর প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মূল উপায়।।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী? ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী? ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী? ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী? ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?

সময়ের সংলাপের ফেইসবুক পেইজ

গুম প্রতিরোধে নতুন অধ্যাদেশ জারি

বাংলাদেশে পেপ্যাল আসার সম্ভাবনা

সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স চাকরি বিজ্ঞপ্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *