News

পরীবাগে কি পরীদের বসবাস ছিলো

পরীবাগে কি পরীদের বসবাস ছিলো

ঢাকা শহরের ইতিহাস শুধু ইট-পাথরের গল্প নয়; এর প্রতিটি এলাকার নামের পেছনে লুকিয়ে আছে রাজনীতি, সংস্কৃতি, পরিবার ও সময়ের স্মৃতি। এমনই এক ঐতিহাসিক এলাকা হলো পরীবাগ। আজকের ব্যস্ত রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পরীবাগ এক সময় ছিল সবুজে ঘেরা, শান্ত ও অভিজাত এক জনপদ। শাহবাগের অদূরবর্তী এই এলাকাটির নামকরণের পেছনে রয়েছে নবাবি আমলের এক মানবিক ও পারিবারিক গল্প।

উনিশ শতকের শেষভাগ ও বিশ শতকের শুরুর দিকে ঢাকা ছিল নবাবদের প্রভাবাধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। সেই সময় ঢাকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে ঢাকা নবাব পরিবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নবাব সলিমুল্লাহ ছিলেন এই পরিবারের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য। শিক্ষা, রাজনীতি ও নগর উন্নয়নে তার অবদান আজও ইতিহাসে স্মরণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক ঐতিহাসিক ও গবেষকের মতে, নবাব সলিমুল্লাহর এক সৎ বোন ছিলেন, যার নাম ছিল পরীবানু। নবাব পরিবারের ভেতর পারিবারিক বন্ধন ও সম্মান প্রদর্শনের রীতি অনুযায়ী, নবাব সলিমুল্লাহ তার সৎ বোনের জন্য শাহবাগ এলাকার কাছাকাছি একটি সুন্দর বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। সেই সময় বাগানবাড়ি ছিল অভিজাত বসবাসের প্রতীক—চারপাশে সবুজ গাছপালা, ফুলের বাগান, প্রশস্ত খোলা জায়গা এবং মনোরম পরিবেশ।

এই বাগানবাড়িতেই পরীবানু বসবাস শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার নাম এবং সেই বাগানবাড়ির পরিচিতি এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ স্থানটিকে পরীবানুর বাগান হিসেবে চিনতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে “পরীবানুর বাগান” সংক্ষিপ্ত হয়ে পরীবাগ নামে পরিচিতি লাভ করে। এভাবেই ব্যক্তিনামের সঙ্গে ভৌগোলিক পরিচয় যুক্ত হয়ে একটি স্থানের নাম স্থায়ী হয়ে যায়।

পরীবাগ নামকরণ শুধু একটি ব্যক্তিগত সম্মানের গল্প নয়; এটি নবাবি আমলের সামাজিক কাঠামোর প্রতিফলনও বটে। সেই সময় অভিজাত পরিবারগুলো নিজেদের পরিবারের সদস্যদের নামে বাড়ি, বাগান বা এলাকা নামকরণ করত। এটি ছিল সম্মান প্রদর্শন ও সামাজিক অবস্থান প্রকাশের একটি উপায়। পরীবাগ তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

শুরুর দিকে পরীবাগ এলাকা ছিল মূলত আবাসিক এবং শান্তিপূর্ণ। এখানে বসবাস করতেন নবাব পরিবারের ঘনিষ্ঠজন, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং সমাজের অভিজাত শ্রেণির মানুষ। প্রশস্ত রাস্তা, সবুজ পরিবেশ ও পরিকল্পিত স্থাপত্যের কারণে পরীবাগ দ্রুত একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। পাশেই শাহবাগ, রমনা ও হাতিরঝিলের মতো এলাকাগুলোর সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল সহজ।

ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকা শহরের সম্প্রসারণ শুরু হলে পরীবাগের গুরুত্ব আরও বাড়ে। প্রশাসনিক কার্যক্রম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্র হিসেবে আশপাশের এলাকাগুলো গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সময়ে পরীবাগ ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে।

বর্তমানে পরীবাগ আর শুধু একটি আবাসিক এলাকা নয়। এখানে রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিক ভবন। তবে আধুনিকায়নের ভিড়েও পরীবাগ তার ঐতিহাসিক পরিচয় হারায়নি। নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে নবাবি ঐতিহ্যের স্মৃতি এবং এক নারীর নাম, যিনি সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ইতিহাসে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।

পরীবাগ নামকরণের ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে একটি এলাকার নাম শুধু একটি শব্দ নয়; এটি সময়, মানুষ ও সংস্কৃতির সমন্বিত ফল। পরীবাগের ক্ষেত্রে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক—ভাই ও বোনের ভালোবাসা—ঢাকা শহরের মানচিত্রে স্থায়ী হয়ে গেছে। এই ধরনের নামকরণ ঢাকার বহু এলাকাতেই দেখা যায়, যেমন শাহবাগ, রমনা বা আজিমপুর।

সবশেষে বলা যায়, পরীবাগ নামকরণের ইতিহাস ঢাকা শহরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নবাব সলিমুল্লাহ ও তার সৎ বোন পরীবানুর নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই গল্প শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, বরং এটি ঢাকার পরিচয় ও ঐতিহ্যের অংশ। ব্যস্ত নগরজীবনের মাঝেও পরীবাগ আজও তার নামের ভেতর দিয়ে সেই ইতিহাস বহন করে চলেছে।

পরীবাগে কি পরীদের বসবাস ছিলো পরীবাগে কি পরীদের বসবাস ছিলো পরীবাগে কি পরীদের বসবাস ছিলো পরীবাগে কি পরীদের বসবাস ছিলো পরীবাগে কি পরীদের বসবাস ছিলো পরীবাগে কি পরীদের বসবাস ছিলো

কারওয়ান বাজার নামকরণের ইতিহাস

আজিমপুর নামকরণের ইতিহাস

ভূতের গলি নামকরণের ইতিহাস

শাহবাগ নামকরণের ইতিহাস

রমনা নামকরণের ইতিহাস

পিলখানা নামকরণের ইতিহাস

গেন্ডারিয়া নামকরণের ইতিহাস

ধানমন্ডি নামের নাম করনের ইতিহাস

মাহুতটুলি নামকরণের ইতিহাস

হাতিরঝিল নামকরণের ইতিহাস

এলিফ্যান্ট রোডের নামকরণের ইতিহাস

সময়ের সংলাপের ফেইসবুক গ্রুপ

সময়ের সংলাপের ফেইসবুক পেইজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *