News

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant

Table of Contents

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Payra Thermal Power Plant) – পরিচিতি ও ইতিহাস

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পায়রা বন্দরের নিকটে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি উৎপাদন প্রকল্প। এটি দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে।

প্রকল্পের শুরু ও পরিকল্পনা:
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনা শুরু হয় ২০১০ সালের দিকে, দেশের শক্তি সংকট দূর করতে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (BPDB), যেখানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে কাজ করা হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের দক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা।

প্রকল্পের স্থান ও ভৌগোলিক সুবিধা:
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা নদীর তীরে অবস্থিত। নদীর তীরবর্তী অবস্থান প্রকল্পটিকে জ্বালানি সরবরাহ এবং কাঁচামালের পরিবহনের জন্য সুবিধাজনক করেছে। এছাড়াও, এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।

প্রকল্পের ক্ষমতা ও ইউনিট:
প্রাথমিকভাবে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা ছিল ১,৩২০ মেগাওয়াট, যা পরে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি কয়লা ও গ্যাস ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত টার্বাইন ও বয়লার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির।

প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সময়কাল:
প্রকল্পটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ ২০১৩ সালে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে সমস্ত ইউনিট সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের প্রকৌশল ও তত্ত্বাবধানে কাজ হওয়ায় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের শক্তি খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ

প্রকল্পের খরচ ও অর্থায়ন

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। প্রকল্পের মোট খরচ প্রায় ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার (USD) হিসেবে আনুমানিক করা হয়। এই ব্যয় প্রকল্পের স্থাপনা, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরঞ্জাম, বয়লার, টার্বাইন, ট্রান্সমিশন লাইন, জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো উন্নয়নসহ সমস্ত খাতে ব্যবহার হয়েছে।

অর্থায়ন ব্যবস্থা:
প্রকল্পটির অর্থায়নে বাংলাদেশের সরকার, স্থানীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা (যেমন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক – ADB, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি – JICA) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। মোট খরচের প্রায় ৪০% স্থানীয় ব্যাংক ও সরকারী তহবিল থেকে এসেছে, বাকি ৬০% আন্তর্জাতিক ঋণ ও বিনিয়োগ থেকে এসেছে।

স্থানীয় ও বিদেশি খরচের তুলনা:

  • স্থানীয় খরচ: শ্রমিক, স্থানীয় কাঁচামাল এবং স্থানীয় নির্মাণ সংস্থার খরচ তুলনামূলকভাবে কম। এটি অর্থনৈতিকভাবে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছে।
  • বিদেশি খরচ: উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের জন্য বিদেশি খরচ বেশি। টার্বাইন, জেনারেটর এবং আধুনিক কন্ট্রোল সিস্টেম বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।

পরিষ্কারভাবে বলা যায়, বিদেশি খরচ বেশি হলেও এর বিনিময়ে পাওয়া যায় উন্নত প্রযুক্তি এবং স্থায়িত্ব। দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও শ্রম খাতে ব্যয় কম থাকায় অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রভাব:
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় হাজার হাজার স্থানীয় কর্মীকে চাকরি দিয়েছে। স্থায়ীভাবে এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশাসনিক কাজে বহু মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ায় শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উন্নত প্রযুক্তি ও মানদণ্ড:
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টার্বাইন ও বয়লার আধুনিক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি। এটি দীর্ঘমেয়াদে স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে, যা স্থানীয় এবং বিদেশি খরচের সঠিক ব্যয় প্রমাণ করে।

নির্মাণ প্রক্রিয়া

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কার্যক্রম অত্যন্ত জটিল এবং ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন, যা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।

  1. প্রারম্ভিক পরিকল্পনা ও জরিপ:
    • প্রকল্পের জন্য স্থাপনার স্থান নির্বাচন করা হয় পায়রা নদীর তীরবর্তী এলাকা হিসেবে, যেখানে সমুদ্র বন্দর এবং জ্বালানি সরবরাহ সহজে সম্ভব।
    • স্থানীয় মাটির ধরন, পানি স্তর, ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত জরিপ করা হয়েছে।
  2. ভিত্তি নির্মাণ:
    • মাটির নিচে শক্ত ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। বয়লার এবং টার্বাইন স্থাপনের জন্য প্রায় ১০-১৫ মিটার গভীরে কংক্রিট ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে।
    • উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কংক্রিট ও স্টীল ব্যবহার করে স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
  3. উপকরণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপন:
    • জেনারেটর, বয়লার, টার্বাইন এবং কন্ট্রোল সিস্টেম বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।
    • সমস্ত যন্ত্রপাতি আধুনিক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ইনস্টল করা হয়েছে।
  4. বিদ্যুৎ লাইন ও ট্রান্সমিশন:
    • উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের প্রধান বিদ্যুৎ গ্রিডে সংযুক্ত করার জন্য দীর্ঘ দূরত্বে উচ্চ ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
    • স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মান অনুসারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

কাঠামো

  • উপরের কাঠামো:
    • বয়লার, টার্বাইন এবং কন্ট্রোল রুম উপরের স্থাপনায় রাখা হয়েছে।
    • স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে উচ্চমানের স্টীল ও কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে।
  • মাটির নিচের কাঠামো:
    • মূল ভিত্তি ও পাইপলাইন মাটির নিচে স্থাপন করা হয়েছে।
    • হিট এক্সচেঞ্জার এবং জল সরবরাহ ব্যবস্থার পাইপলাইন মাটির নিচে দিয়ে গেছে।
  • আয়তন:
    • প্রকল্পের মোট এলাকা প্রায় ১০০ একর, যার মধ্যে উৎপাদন ইউনিট, অফিস, ট্রান্সমিশন লাইন ও অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত।

প্রযুক্তি

  • জেনারেশন ইউনিট: আধুনিক সুপার ক্রিটিক্যাল বয়লারস্টিম টার্বাইন ব্যবহার করা হয়েছে, যা জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
  • কন্ট্রোল সিস্টেম: আধুনিক SCADA (Supervisory Control and Data Acquisition) ব্যবহার করা হয়েছে।
  • জ্বালানি: প্রধানত কয়লা ভিত্তিক, কিছু অংশে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে।

পরিবেশগত প্রভাব

  • প্রকল্পের সময় পরিবেশগত মূল্যায়ন (Environmental Impact Assessment – EIA) করা হয়েছে।
  • দূষণ কমানোর জন্য ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার, ডাস্ট কালেকশন সিস্টেম এবং ইমিশন মনিটরিং ব্যবস্থা করা হয়েছে।
  • নদী ও সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন অঞ্চলে জলজ জীবন ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা হয়েছে।

খরচ ও অর্থায়ন

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট প্রকল্প খরচ প্রায় ১১০০০ কোটি টাকা (প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

  1. উপকরণ ও যন্ত্রপাতি:
    • বয়লার, টার্বাইন, জেনারেটর ও কন্ট্রোল সিস্টেমের জন্য বিদেশি সরঞ্জাম।
    • খরচ প্রায় ৬০%, যা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।
  2. নির্মাণ ও অবকাঠামো:
    • মাটির নিচে ভিত্তি, পাইপলাইন, ট্রান্সমিশন লাইন এবং অফিস।
    • খরচ প্রায় ৩০%, যা স্থানীয় কংক্রিট, স্টীল ও শ্রম দিয়ে তৈরি।
  3. পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
    • ডাস্ট কালেকশন সিস্টেম, ফ্লাই অ্যাশ ব্যবস্থাপনা, নদী ও পরিবেশ সংরক্ষণ।
    • খরচ প্রায় ১০%

অর্থায়ন:

  • প্রকল্পটি মিশ্র অর্থায়ন পদ্ধতিতে নির্মিত হয়েছে।
    • স্থানীয় ব্যাংক এবং সরকারী তহবিল দ্বারা ৫০%।
    • বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগকারী দ্বারা ৫০%।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক তুলনা

দিকপায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রভারত (Tata Thermal)থাইল্যান্ড (Ratchaburi Power Plant)
ক্ষমতা1320 MW1200 MW1000 MW
নির্মাণ খরচ১১০০০ কোটি টাকাপ্রায় ৯০০০ কোটি টাকাপ্রায় ৮৫০০ কোটি টাকা
নির্মাণ সময়৫ বছর৪.৫ বছর৪ বছর
প্রযুক্তিসুপার ক্রিটিক্যাল বয়লারসাব-ক্রিটিক্যাল বয়লারসুপার ক্রিটিক্যাল বয়লার
পরিবেশ নিয়ন্ত্রণউন্নত ফ্লাই অ্যাশ ও ডাস্ট কালেকশনমৌলিক ফিল্টারউন্নত ইমিশন মনিটরিং
স্থানীয় শ্রম ব্যবহার৭০%৬০%৬৫%

বিশ্লেষণ:

  • পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রযুক্তি এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে অনেক উন্নত।
  • নির্মাণ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি, তবে স্থায়িত্ব ও দক্ষতা বেশি।
  • স্থানীয় শ্রম ব্যবহার বেশি হওয়ায় অর্থনীতি সচল থাকে।

কাজের মান

  1. গুণমান নিশ্চিতকরণ:
    • সমস্ত যন্ত্রপাতি ISO ও আন্তর্জাতিক মান অনুসারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
    • বয়লার ও টার্বাইনের দক্ষতা সর্বাধিক রেটিং অনুযায়ী।
  2. নিরাপত্তা:
    • শ্রমিকদের জন্য উন্নত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ।
    • সাইটে ২৪/৭ নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।
  3. পরিবেশ বান্ধব:
    • ফ্লাই অ্যাশ পুনর্ব্যবহার ও ডাস্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
    • নদী ও সমুদ্র সংলগ্ন জলজ পরিবেশ সংরক্ষণ।

উপসংহার

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি উন্নত ও স্থায়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, যা:

  • দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সক্ষম।
  • আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নির্মিত ও পরিচালিত।
  • স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণে সেরা উদাহরণ।
  • স্থানীয় শ্রম ব্যবহার ও অর্থায়নে দেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করছে

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র Payra Thermal Power Plant

দেশে প্রথমবারের মতো শনাক্ত ‘Genotype IIIb’ ভাইরাস

আরও শক্তিশালী হচ্ছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর

ঢাকা মেট্রোরেল (MRT Line-6) — বিস্তৃত বিশ্লেষণ

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসন (ISKCON)

খিরনিগাছ: পরিচিতি ব্যবহার ও উপকারিতা

খাবার হজম প্রক্রিয়া: ধাপ, কৌশল এবং হজম উন্নত করার বৈজ্ঞানিক উপায়

কাঁচা হলুদের ১০০টি অবিশ্বাস্য উপকারিতা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *