LifestyleLifestyle

গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়?

গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়?

চা ও কফি—দুই পানীয়ই আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দিনের ক্লান্তি কাটাতে, ঘুম তাড়াতে কিংবা মন সতেজ করতে এই পানীয়গুলো অনেকেরই প্রিয়। এমনকি গর্ভাবস্থায়ও বহু নারী এই অভ্যাস বাদ দিতে পারেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো—গর্ভাবস্থায় চা বা কফি পান করা কি নিরাপদ? যদি করা যায়, তবে কতটুকু? এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের ক্যাফেইন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।

ক্যাফেইন কী এবং কেন সতর্কতা প্রয়োজন?

চা ও কফির প্রধান সক্রিয় উপাদান হলো ক্যাফেইন, যা একটি প্রাকৃতিক স্টিমুল্যান্ট। এটি মস্তিষ্কের ওপর উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে, মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং ঘুম কমায়। তবে গর্ভাবস্থায় বিষয়টি এত সহজ নয়। কারণ ক্যাফেইন মায়ের শরীর থেকে সরাসরি প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে শিশুর শরীরে পৌঁছে যায়। ভ্রূণের লিভার যথেষ্ট পরিপক্ব নয়, তাই ক্যাফেইন ভাঙতে পারে না। ফলে এর প্রভাব ভ্রূণের ওপর বেশি পড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ACOG-এর নির্দেশনা

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা ও বিশেষজ্ঞ মতামত থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রচলিত—

  1. WHO (World Health Organization):
    একজন গর্ভবতী নারী দৈনিক সর্বোচ্চ ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন গ্রহণ করতে পারেন।
  2. ACOG (American College of Obstetrics and Gynecology):
    গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত নয়।

কারণ, ২০০–৩০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করলে গর্ভস্থ শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।

এক কাপ চা ও কফিতে কতটুকু ক্যাফেইন থাকে?

ধারণা পরিষ্কার করতে চলুন দেখি—

  • এক কাপ (প্রায় ২০০ মি.লি.) ব্ল্যাক কফি → প্রায় ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন
  • এক কাপ ব্ল্যাক টি → প্রায় ৩৩ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন
  • গ্রীন টি → প্রায় ২০–৩০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন
  • ইনস্ট্যান্ট কফি → সাধারণত ৬০–৮০ মিলিগ্রাম
  • চকলেট/কোকো ড্রিংকস → ১০–২০ মিলিগ্রাম
  • কোল্ড ড্রিংক/এনার্জি ড্রিংকস → ৩০–১২০ মিলিগ্রাম (অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ)

অতএব, দেখা যাচ্ছে এক কাপ কফিই প্রায় অর্ধেক ক্যাফেইনের সীমা পূরণ করে ফেলে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইনের ঝুঁকি

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে গর্ভাবস্থায় নিম্নলিখিত ঝুঁকিগুলো বেড়ে যায়—

১. গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে মিসক্যারেজের ঝুঁকি বাড়ায়।

২. শিশুর কম ওজন নিয়ে জন্ম

মায়ের রক্তে অতিরিক্ত ক্যাফেইন থাকলে শিশুর বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়, ফলে জন্মের সময় ওজন কম হতে পারে।

৩. শিশুর হার্টবিট বেড়ে যাওয়া ও অস্থিরতা

ক্যাফেইন শিশুর স্নায়ুতন্ত্রে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে অতিসংবেদনশীলতার ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. মায়ের ঘুমের ব্যাঘাত ও ডিহাইড্রেশন

চা-কফি ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় বিপজ্জনক। একই সঙ্গে ঘুমের সমস্যা, বুক ধড়ফড়, অস্বস্তিও বাড়ে।

৫. পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি

ক্যাফেইন অ্যাসিডিটি বাড়ায়, যা গর্ভবতী নারীদের জন্য অতিরিক্ত অস্বস্তিকর।

তাহলে গর্ভাবস্থায় কতটুকু চা বা কফি নিরাপদ?

নির্দেশনা অনুযায়ী—

  • দিনে ১ কাপ কফি (১০০ মি.গ্রা.)
  • সঙ্গে ১–২ কাপ চা (৩০–৩৩ মি.গ্রা. করে)

এভাবে মোট ১৫০–১৮০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন এর মধ্যে থাকলে তা সাধারণত নিরাপদ।

তবে যাদের—

  • উচ্চ রক্তচাপ
  • ঘুমের সমস্যা
  • অ্যাসিডিটি
  • বা পূর্বের গর্ভপাতের ইতিহাস

আছে, তাদের জন্য আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যাফেইনের পরিমাণ কমিয়ে বা পুরোপুরি বন্ধ করেও দেয় কেউ কেউ।

গ্রিন টি কি নিরাপদ?

অনেকেই মনে করেন গ্রিন টি খুব নিরাপদ। সত্যি বলতে—

  • গ্রিন টিতে ক্যাফেইন কম থাকে
  • কিন্তু এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফোলিক অ্যাসিড শোষণে বাধা দিতে পারে
  • ফোলিক অ্যাসিড ভ্রূণের নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধে অত্যন্ত জরুরি

তাই গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি দিনে ১ কাপের বেশি নয়।

ডিক্যাফ (Decaf) কফি কি খান যেতে পারে?

হ্যাঁ, ডিক্যাফ কফিতে ক্যাফেইন খুব কম থাকে (৩–৫ মিলিগ্রাম)। তবে সম্পূর্ণ ক্যাফেইনমুক্ত নয়।
তাই দিনে ১–২ কাপ ডিক্যাফ কফি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।

চা–কফির স্বাস্থ্যকর বিকল্প কী হতে পারে?

যদি ক্যাফেইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে চান, তাহলে আপনি—

  • গরম দুধ
  • লেবু পানি
  • হারবাল টি (ক্যাফেইনমুক্ত)
  • ডাবের পানি
  • ফলের রস
  • পুদিনা/আদা চা (ক্যাফেইন ছাড়া)

এসব পান করতে পারেন। এগুলো শরীরের পানিশূন্যতা দূর করবে এবং পুষ্টি যোগ করবে।

শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় চা ও কফি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়। তবে সীমার মধ্যে থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ACOG-এর নির্দেশনা অনুযায়ী দৈনিক ২০০–৩০০ মিলিগ্রামের মধ্যে ক্যাফেইন গ্রহণ নিরাপদ। এক কাপ কফির সাথে এক–দুটি চা হলে সমস্যা নেই। তবে অভ্যাসগতভাবে দিনে ৪–৫ কাপ চা বা কফি পান করা ভবিষ্যৎ শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে।

নিজের ও সন্তানের সুস্থতার কথা বিবেচনা করে চা ও কফিকে পরিমিত করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়? গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়? গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়? গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়? গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়? গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়? গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়?

গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়? গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়? গর্ভাবস্থায় কি চা-কফি পান করা যায়?

সময়ের সংলাপের ফেইসবুক পেইজ

গুম প্রতিরোধে নতুন অধ্যাদেশ জারি

বাংলাদেশে পেপ্যাল আসার সম্ভাবনাসন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স চাকরি বিজ্ঞপ্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *