INTERNATIONAL NEWS

গানিম আল-মিফতাহের সাহসিকতা

গানিম আল-মিফতাহের সাহসিকতা

গানিম আল-মিফতাহ: ফিফা বিশ্বকাপে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুপ্রেরণার প্রতীক

গতকাল রবিবার, ২০ নভেম্বর, কাতারের আল-খোর অঞ্চলের আল-বাইত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী পর্বে ইতিহাসের এক অসাধারণ মুহূর্তের সাক্ষী হয় সমগ্র বিশ্ব। এই ৯২ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে এবারই প্রথম ফিফা বিশ্বকাপে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। পবিত্র কোরআন থেকে পাঠ করেন ২০ বছর বয়সী গানিম আল-মিফতাহ (Ghanim Al-Muftah), যিনি এই বিশ্বকাপের শুভেচ্ছাদূত।

গানিম আল-মিফতাহকে এপ্রীলে কাতারের পক্ষ থেকে ফিফা বিশ্বকাপের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নির্বাচন করা হয়। তাঁর এই মনোনয়ন শুধু ক্রীড়া জগতের জন্যই নয়, বরং প্রতিবন্ধী ও অক্ষম মানুষের জন্যও অনুপ্রেরণার প্রতীক। গানিমের জীবন একটি নিখুঁত প্রমাণ যে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনো মানুষের দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে আটকাতে পারে না।

জীবনযাত্রা ও প্রতিবন্ধকতা

গানিম ২০০২ সালে কডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম (Codal Regression Syndrome, CDS) নামের একটি বিরল ব্যাধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এই রোগের কারণে তাঁর দুই পা এবং নিম্ন মেরুদণ্ডের বিকাশ ব্যাহত হয়। তবে এ বাধা কখনো তাঁকে থামাতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই গানিম জীবনের সকল চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছেন দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার সঙ্গে।

তাঁর লক্ষ্য সর্বদা স্পষ্ট ছিল: নিজেকে একজন কূটনীতিক হিসেবে গড়ে তোলা। বর্তমান তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। শুধু একাডেমিক যোগ্যতাই নয়, গানিমের ক্রীড়া ও উদ্যোক্তা জীবনের অভিজ্ঞতাও অভূতপূর্ব।

বহুমুখী প্রতিভা ও ক্রীড়া দক্ষতা

শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও গানিম বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে নিজেকে নিখুঁতভাবে প্রমাণ করেছেন। তিনি নিয়মিত সাঁতার, স্কুবা ডাইভিং, স্কেটবোর্ডিং এবং রক ক্লাইম্বিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। এসব কর্মকাণ্ড তাঁকে শুধু শারীরিকভাবে শক্তিশালী করেনি, বরং মানসিক দৃঢ়তা এবং সাহসিকতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করেছে।

গানিমকে কাতারের সবচেয়ে কম বয়সী উদ্যোক্তা হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ঘারিসা আইসক্রিম নামে একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা কেবল বাণিজ্যিক সাফল্যই নয়, সামাজিক দায়িত্বও বহন করে। পাশাপাশি তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের সহযোগিতার জন্য দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে সমাজে অসামান্য অবদান রাখছেন।

অনুপ্রেরণার প্রতীক

গানিম আল-মিফতাহের জীবন আমাদের শেখায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই সীমাবদ্ধতা নয়, বরং এটি এক নতুন সম্ভাবনার প্রান্ত। তিনি প্রমাণ করেছেন যে দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস এবং পরিশ্রমই মানুষকে সফল করে। ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী পর্বে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে তিনি শুধু ধর্মীয় গুরুত্বই বৃদ্ধি করেননি, বরং সারা বিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

গানিমের দৃষ্টি এখন ভবিষ্যতের দিকে। তিনি কূটনীতিক হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করতে চান, যেখানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক নীতি নিয়ে কাজ করবেন। পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে চান, বিশেষত অক্ষম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য।

উপসংহার

গানিম আল-মিফতাহের জীবন ও কর্মকাণ্ড সত্যিই অনুপ্রেরণার উদাহরণ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, জটিল পরিস্থিতি বা সামাজিক সীমাবদ্ধতা কখনোই মানুষকে থামাতে পারে না—এটাই গানিমের জীবনের মূল পাঠ। তাঁর কোরআন তেলাওয়াত, ক্রীড়া ও ব্যবসায়িক সাফল্য এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা একত্রে তাঁকে পুরো বিশ্বের কাছে অনন্য করে তুলেছে।

ফিফা বিশ্বকাপে তাঁর উপস্থিতি শুধু ক্রীড়া ও ধর্মীয় মহিমা নয়, বরং প্রতিবন্ধী ও অক্ষম মানুষের সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। গানিম আল-মিফতাহ প্রমাণ করেছেন, সাহস, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে কোন বাধাই বড় নয়।

গানিম আল-মিফতাহের সাহসিকতা গানিম আল-মিফতাহের সাহসিকতা গানিম আল-মিফতাহের সাহসিকতা গানিম আল-মিফতাহের সাহসিকতা গানিম আল-মিফতাহের সাহসিকতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *