এই জিকির জানলে দুঃখ থাকবে না

এই জিকির জানলে দুঃখ থাকবে না

ইসলাম ধর্মে জিকির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ‘জিকির’ শব্দের অর্থ স্মরণ করা। আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করাই হলো জিকির। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব।” (সূরা আল-বাকারা: ১৫২)। মানুষের হৃদয়কে প্রশান্ত, আত্মাকে পবিত্র এবং জীবনকে সুশৃঙ্খল করার জন্য জিকিরের ভূমিকা অপরিসীম। জিকিরের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ অর্জন করে।

জিকিরের গুরুত্ব

জিকির মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে। দুনিয়ার ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা ও পাপাচার মানুষের হৃদয়কে অস্থির করে তোলে। আল্লাহর জিকিরই একমাত্র উপায়, যা অন্তরে প্রকৃত শান্তি এনে দেয়। কুরআনে বলা হয়েছে, “জেনে রাখো, আল্লাহর জিকিরেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।” (সূরা আর-রাদ: ২৮)। নিয়মিত জিকির করলে মানুষের ঈমান শক্তিশালী হয়, চরিত্র সুন্দর হয় এবং পাপ থেকে দূরে থাকার শক্তি জন্মায়।

১. সুবহানাল্লাহ

“সুবহানাল্লাহ” অর্থ হলো— আল্লাহ সব দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র। এই জিকির পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দিনে ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পাঠ করবে, তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়।” সুবহানাল্লাহ পাঠ করলে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।

২. আলহামদুলিল্লাহ

“আলহামদুলিল্লাহ” অর্থ— সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। মানুষ জীবনে অসংখ্য নেয়ামত ভোগ করে, কিন্তু অনেক সময় তা উপলব্ধি করতে পারে না। আলহামদুলিল্লাহ পাঠ আমাদের কৃতজ্ঞ হতে শেখায়। কৃতজ্ঞ বান্দাকে আল্লাহ আরও বেশি নেয়ামত দান করেন। সুখে-দুঃখে আলহামদুলিল্লাহ বলা একজন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৩. আল্লাহু আকবার

“আল্লাহু আকবার” অর্থ— আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। এই জিকির আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে দুনিয়ার কোনো শক্তিই আল্লাহর চেয়ে বড় নয়। ভয়, হতাশা ও দুশ্চিন্তার সময় আল্লাহু আকবার পাঠ করলে মন দৃঢ় হয়। নামাজের প্রতিটি অংশে এই জিকির রয়েছে, যা নামাজকে অর্থবহ করে তোলে।

৪. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

এটি ইসলামের কালিমা ও সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। এর অর্থ— আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। এই বাক্যই ইসলামের মূল ভিত্তি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সর্বোত্তম জিকির হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” এই জিকির পাঠ করলে ঈমান মজবুত হয় এবং শিরক থেকে মুক্ত থাকা সহজ হয়।

৫. আসতাগফিরুল্লাহ

“আসতাগফিরুল্লাহ” অর্থ— আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। জেনে বা না জেনে আমরা প্রতিনিয়ত গুনাহ করে থাকি। ইস্তেগফার মানুষের গুনাহ মাফের মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) দিনে ৭০ বারের বেশি ইস্তেগফার করতেন। নিয়মিত আসতাগফিরুল্লাহ পাঠ করলে আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করেন এবং বিপদ দূর করেন।

৬. দরুদ শরিফ

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ বান্দার ওপর রহমত নাজিল করেন। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করেন।” দোয়া কবুলের জন্য দরুদ পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৭. হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকিল

এর অর্থ— আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। বিপদ, ভয় বা সংকটের সময় এই জিকির পাঠ করলে অন্তরে সাহস আসে। এটি তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসার শিক্ষা দেয়।

জিকিরের উপকারিতা

জিকির মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে, চরিত্র উন্নত করে এবং আত্মাকে শক্তিশালী করে। জিকিরের মাধ্যমে মানুষের ধৈর্য বৃদ্ধি পায়, মনোযোগ বাড়ে এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা গভীর হয়। জিকিরকারী ব্যক্তি সমাজেও একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়।

উপসংহার

জিকির শুধু মুখে উচ্চারণের বিষয় নয়; বরং অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করার বিষয়। নিয়মিত ও মনোযোগের সঙ্গে জিকির করলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনে শান্তি ও সফলতা লাভ করা যায়। তাই আমাদের উচিত দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ জিকিরগুলো অভ্যাসে পরিণত করা এবং আল্লাহর স্মরণে নিজেকে সর্বদা ব্যস্ত রাখা।

এই জিকির জানলে দুঃখ থাকবে না এই জিকির জানলে দুঃখ থাকবে না এই জিকির জানলে দুঃখ থাকবে না এই জিকির জানলে দুঃখ থাকবে না এই জিকির জানলে দুঃখ থাকবে না