গ্যাস ও অ্যাসিডিটির প্রধান কারণ এবং তা থেকে মুক্তির উপায়
লিখেছেন: সময়ের সংলাপ স্বাস্থ্য ডেস্ক
আপনি কি প্রায়ই পেট ফাঁপা, অম্বল বা বুক জ্বালাপোড়ায় ভোগেন? জেনে নিন গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মূল কারণ এবং ঘরোয়া কার্যকর সমাধান।
গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মূল কারণসমূহ
গ্যাস ও অ্যাসিডিটি এখন ঘরে ঘরে একটি সাধারণ সমস্যা। এর পেছনে রয়েছে অনিয়মিত জীবনযাপন, ভুল খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপ। নিচে বিস্তারিতভাবে কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
১️⃣ খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণ
- তেল ও মশলাদার খাবার: অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত, ভাজাপোড়া এবং বেশি মশলাযুক্ত খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিডের নিঃসরণ বাড়ায়।
- অ্যাসিডিক পানীয়: চা, কফি, কোলা বা কার্বনেটেড ড্রিঙ্ক নিয়মিত পান করলে পাকস্থলীতে অম্লতা বৃদ্ধি পায়।
- নির্দিষ্ট সবজি: ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মটরশুঁটি এবং কিছু ডাল জাতীয় খাবার অনেকের পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে।
- দ্রুত খাওয়া: তাড়াহুড়ো করে বা কথা বলতে বলতে খাবার খেলে খাবারের সাথে বাতাস পেটে ঢোকে, যা গ্যাস তৈরি করে।
২️⃣ জীবনযাত্রা ও অভ্যাসজনিত কারণ
- অনিয়মিত খাবার: দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা বা অসময়ে খাবার খেলে অ্যাসিড তৈরি হয়।
- ধূমপান ও মদ্যপান: হজমতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে এবং পাকস্থলীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: বসে থাকা জীবনধারা হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
- মানসিক চাপ: অতিরিক্ত উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি করে।
- খাওয়ার পর পরই শুয়ে পড়া: এতে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে, ফলে বুক জ্বালাপোড়া হয়।
গ্যাস ও অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তির উপকারী খাবার
সঠিক খাবার বেছে নিলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিচে কিছু কার্যকর খাবার ও প্রাকৃতিক উপাদানের তালিকা দেওয়া হলো:
১️⃣ কম অ্যাসিডযুক্ত ফল
- কলা: প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে, পেটে জ্বালাপোড়া কমায়।
- তরমুজ ও শসা: জলের পরিমাণ বেশি থাকায় পাকস্থলীর অ্যাসিডকে লঘু করতে সাহায্য করে।
- পেঁপে: এতে থাকা ‘পাপাইন’ এনজাইম হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস কমায়।
- আপেল: উচ্চ ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সহায়ক।
২️⃣ প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপাদান
- আদা: হজমের এনজাইম সক্রিয় করে, গ্যাস ও প্রদাহ কমায়।
- জিরা: গরম জলে জিরা ফোটানো পানি পান করলে দ্রুত আরাম মেলে।
- পুদিনা: হজমতন্ত্রকে ঠাণ্ডা রাখে, বমি ভাব ও গ্যাস কমায়।
- মেথি: রাতে ভিজানো মেথি জল খালি পেটে খেলে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩️⃣ অন্যান্য উপকারী খাবার
- ঠাণ্ডা দুধ (ফ্যাট ছাড়া): পাকস্থলীর অ্যাসিড নিরপেক্ষ করে তাৎক্ষণিক আরাম দেয়।
- টক দই: এতে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হজমশক্তি বাড়ায় ও গ্যাস প্রতিরোধ করে।
- ওটমিল ও গোটা শস্য: উচ্চ ফাইবার পাকস্থলীর অ্যাসিড শোষণ করে হজমে সাহায্য করে।
গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কমানোর অতিরিক্ত টিপস
- একবারে বেশি না খেয়ে অল্প পরিমাণে ঘন ঘন খাবার খান।
- খাবার ধীরে ধীরে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন (৮-১০ গ্লাস)।
- খাওয়ার পর পরই শুয়ে না পড়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন বা বসে থাকুন।
- চা, কফি, সোডা ও ফাস্টফুড সীমিত করুন।
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করুন।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে পরিহার করুন।
চিকিৎসা ও সতর্কতা
যদি গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা নিয়মিত হয়, নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- প্রতিদিন বুক জ্বালাপোড়া বা টক ঢেকুর ওঠা
- খাবারের পর প্রচণ্ড অস্বস্তি বা পেট ব্যথা
- রক্তবমি বা কালচে মল
- অতিরিক্ত ওজন হ্রাস বা ক্ষুধামান্দ্য
সতর্কতা: দীর্ঘস্থায়ী অ্যাসিডিটি কখনও কখনও “গ্যাস্ট্রিক আলসার” বা “GERD” (Gastroesophageal Reflux Disease)-এ পরিণত হতে পারে, তাই বিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আজ ঘরে ঘরে ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস: বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহ বাস্তবতা”কারণ:






